এসএসসি পরীক্ষা ২০২৫ এর ফল পুনঃনিরীক্ষণের নিয়মাবলি

এসএসসি রেজাল্ট বের হয়েছে। কেউ খুশিতে লাফাচ্ছেন, আবার কেউ হতাশ হয়ে বসে আছেন—এই দৃশ্য আমরা প্রতি বছরই দেখি। আপনি যদি দ্বিতীয় দলে পড়েন, মানে আপনার রেজাল্ট প্রত্যাশামতো হয়নি, তাহলে প্রথমেই বলব—হতাশ হবেন না।

কারণ কী জানেন?
এই ফলাফল চূড়ান্ত নয়। ফলাফল পেয়ে অনেকেই হয়তো নিজের প্রাপ্ত নম্বরে সন্তুষ্ট হতে পারো না। মনে হতে পারে, “ইশ! আর কয়েকটা নম্বর পেলেই তো A+ পেয়ে যেতাম” অথবা “এই বিষয়ে তো আমার আরও ভালো করার কথা ছিলো, নম্বরটা এত কম কেন আসলো?” এই ধরনের চিন্তা মাথায় আসাটা কিন্তু খুবই স্বাভাবিক। আর এই স্বাভাবিক চিন্তার সমাধান হিসেবেই শিক্ষা বোর্ড আমাদের জন্য একটি সুযোগ রেখেছে, যার নাম ‘ফল পুনঃনিরীক্ষণ’ বা ‘বোর্ড চ্যালেঞ্জ’।

আপনি চাইলে নিজের রেজাল্ট আবারও যাচাইয়ের জন্য বোর্ডে আবেদন করতে পারেন।

আজকের এই পোস্টে আমরা এসএসসি পরীক্ষা ২০২৫ এর ফল পুনঃনিরীক্ষণের আদ্যোপান্ত নিয়ে আলোচনা করবো। একদম সহজ ভাষায়, ধাপে ধাপে পুরো প্রক্রিয়াটি আপনাদের সামনে তুলে ধরবো, যেন আপনাদের মনে কোনো রকম দ্বিধা বা প্রশ্ন না থাকে। তাহলে চলুন, আর দেরি না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক!

প্রথমেই জেনে নিই, ফল পুনঃনিরীক্ষণ বা বোর্ড চ্যালেঞ্জ আসলে কী?

ফল পুনঃনিরীক্ষণ কী?

অনেকের মনেই একটা বিরাট ভুল ধারণা কাজ করে যে, বোর্ড চ্যালেঞ্জ করা মানে হলো বোর্ড আবার নতুন করে খাতা দেখে। এই ধারণাটি কিন্তু সম্পূর্ণ ভুল!

আসলে, ফল পুনঃনিরীক্ষণে তোমার খাতা নতুন করে দেখা হয় না। বরং, কিছু নির্দিষ্ট বিষয় চেক করা হয়। বিষয়গুলো হলো:

১. নম্বর গণনায় ভুল: তোমার খাতার ভেতরের প্রতিটা প্রশ্নের উত্তরে যে নম্বর দেওয়া হয়েছে, সেগুলো যোগ করতে কোনো ভুল হয়েছে কি না।
২. সব উত্তরে নম্বর প্রদান: খাতার সকল প্রশ্নের উত্তরে নম্বর দেওয়া হয়েছে কি না, কোনো উত্তরপত্র নম্বর ছাড়া বাদ পড়ে গেছে কি না।
৩. নম্বর স্থানান্তরে ভুল: খাতার ভেতরের মোট নম্বরটি কভার পেইজে তুলতে কোনো ভুল হয়েছে কি না।
৪. ** বৃত্ত ভরাট:** OMR শিটে বৃত্ত ভরাট অনুযায়ী নম্বর প্রদান করা হয়েছে কি না (বিশেষ করে বহুনির্বাচনী অংশের জন্য)।

এই বিষয়গুলো যাচাই করা হয়।

সহজ কথায় বলতে গেলে

ফলাফল সন্তোষজনক না হলে কী করবেন?

প্রথমেই বুঝে নেওয়া দরকার—আপনার রেজাল্ট কেন কম এসেছে বলে মনে হচ্ছে?

  • আপনি কি মনে করছেন খাতায় আপনার লেখার চেয়ে নম্বর কম এসেছে?
  • বা হয়তো কোনো বিষয়ের রেজাল্টে “Absent” বা “0” দেখাচ্ছে?
  • অথবা GPA একেবারেই আশানুরূপ হয়নি?

এইসব ক্ষেত্রে আপনি রিভিউ বা পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করতে পারেন। আর হ্যাঁ, অনেক সময় এই পুনঃনিরীক্ষণের ফলে রেজাল্ট পরিবর্তনও হয়। তাই আপনি যে একেবারে সুযোগহীন তা কিন্তু নয়!

নম্বর যোগ করতে বা অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণে অনেক সময় রেজাল্ট পরিবর্তিত হয়।

পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন কবে থেকে শুরু হবে?

রেজাল্ট প্রকাশের পরদিন থেকেই পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন গ্রহণ শুরু হয় এবং ৫-৭ দিনের মধ্যে আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যায়।

২০২৫ সালের এসএসসি রেজাল্ট ১০ জুলাই প্রকাশিত হয়েছে, এবং ১১ জুলাই থেকে শুরু করে ১৭ জুলাই পর্যন্ত বোর্ড চ্যালেঞ্জ এর আবেদন করা যাবে।

কীভাবে পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করবেন?

এখন আসি আসল বিষয়ে—আপনি কীভাবে আবেদন করবেন?

এই পুরো প্রক্রিয়াটি করা যায় শুধু টেলিটক মোবাইলের মাধ্যমে SMS পাঠিয়ে।

ধাপ ১: মোবাইলে যান এবং মেসেজ অপশন খুলুন

ধাপ ২: নিচের ফরম্যাটে টাইপ করুন

RSC <space> বোর্ডের নাম (ইংরেজিতে) <space> রোল নম্বর <space> বিষয় কোড

📌 উদাহরণ:

ধরা যাক, আপনার বোর্ড ঢাকা, রোল নম্বর 123456 এবং আপনি বাংলা ও ইংরেজির রিভিউ করতে চান (যাদের কোড 101 এবং 107), তাহলে টাইপ করবেন:

RSC DHA 123456 101,107

এবং পাঠিয়ে দিন 16222 নম্বরে।

ধাপ ৩: ফিরতি মেসেজে পিন এবং ফি জানানো হবে

আপনার মেসেজে যদি কোনো ভুল না থাকে, তাহলে বোর্ড থেকে একটি SMS আসবে। সেখানে থাকবে:

  • বিষয় অনুযায়ী ফি (প্রতি বিষয়ের জন্য ১৫০ টাকা করে)
  • একটি পিন নম্বর
  • আপনার নাম

ধাপ ৪: আবার মেসেজ পাঠিয়ে নিশ্চিত করুন

যদি তথ্য ঠিক থাকে, তাহলে এবার লিখুন:

RSC <space> YES <space> PIN <space> আপনার ফোন নম্বর

🔁 উদাহরণ:

RSC YES 654321 01XXXXXXXXX

এবং এটিও পাঠিয়ে দিন 16222 নম্বরে। ব্যস! আপনার আবেদন সম্পন্ন।

কোন বিষয়ের কোড কী?

এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ভুল কোড দিলে ভুল বিষয়ে আবেদন হয়ে যাবে।

সাধারণ বিষয়ের কোডসমূহ:

বিষয়কোড
বাংলা101
ইংরেজি107
গণিত109
ইসলাম শিক্ষা111
ভৌতবিজ্ঞান136
রসায়ন137
জীববিজ্ঞান138
উচ্চতর গণিত126
অর্থনীতি141

বিষয়ের কোড আপনার মার্কশীটে পাওয়া যাবে।

বোর্ড চ্যালেঞ্জ আবেদনের ফি কত?

  • প্রতিটি বিষয়ের জন্য আবেদন ফি: ১৫০ টাকা
  • দুটি পত্র থাকলে (যেমন বাংলা ১ম ও ২য় পত্র), তাহলে ফি হবে: ৩০০ টাকা

👉 অর্থাৎ আপনি যদি বাংলা, ইংরেজি ও গণিত রিভিউ করতে চান, তাহলে মোট ফি হবে: ৩০০ (বাংলা) + ৩০০ (ইংরেজি) + ১৫০ (গণিত) = ৭৫০ টাকা

ব্যালেন্স ঠিক আছে কিনা দেখে নিন, কারণ SMS খরচও লাগবে।

বোর্ড চ্যালেঞ্জ রেজাল্ট পরিবর্তন হতে কতদিন লাগে?

সাধারণত আবেদন শেষ হওয়ার ১৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যেই পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশ করা হয়। আপনি যে নাম্বার থেকে আবেদন করেছিলেন, ঠিক সেই মোবাইল নাম্বারে SMS পাঠিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।

👉 চাইলে আপনি বোর্ডের ওয়েবসাইটেও রেজাল্ট পরিবর্তিত হয়েছে কিনা চেক করতে পারেন।

এসএসসি রেজাল্ট ২০২৫ কীভাবে দেখবেন? মার্কশীটসহ রেজাল্ট দেখার উপায়

কোন কোন ক্ষেত্রে রেজাল্ট পরিবর্তন হয়?

সত্যি বলতে, সব আবেদনেই রেজাল্ট পরিবর্তন হয় না। তবে নিচের কয়েকটি ক্ষেত্রে হয়ে থাকে:

  • প্রশ্নে নম্বর যোগে ভুল ছিল
  • কোনো প্রশ্নের নম্বর বাদ গেছে
  • মার্কশীটে তথ্য ঠিকমতো যোগ হয়নি

অনেক সময় GPA একধাপ বেড়ে যায়, কখনো আবার Fail → Pass হয়ে যায়!

বাস্তব অভিজ্ঞতা: আমি নিজে কী করেছিলাম?

আমি নিজে যখন SSC দিয়েছিলাম, ইংরেজিতে মনে হয়েছিল নম্বর কম এসেছে। তাই পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেছিলাম। ২০ দিন পর দেখলাম, ইংরেজিতে ৮ নম্বর বেড়ে গেছে! GPA-ও বেড়ে ৪.৫ → ৫ হয়ে গেল।

👉 তাই আমি বলব—আপনার মনে যদি হয় রেজাল্ট ভুল হয়েছে, তবে অবশ্যই আবেদন করুন।

ভুল থাকলে সংশোধন হবে, না থাকলে আপনি অন্তত নিশ্চিন্ত হতে পারবেন।

কী কী ভুল করবেন না?

  • ভুল বিষয় কোড লিখবেন না
  • ভুল বোর্ড কোড দেবেন না
  • সময় শেষ হয়ে গেলে আর আবেদন করা যাবে না, তাই দেরি করবেন না
  • অন্য অপারেটরের মোবাইল (GP, Robi) থেকে SMS দিলে কাজ হবে না—শুধু Teletalk ব্যবহার করুন

📌 বোর্ড কোড তালিকা (SMS-এর জন্য প্রয়োজনীয়)

বোর্ডকোড
ঢাকাDHA
চট্টগ্রামCHI
রাজশাহীRAJ
কুমিল্লাCOM
যশোরJES
বরিশালBAR
সিলেটSYL
দিনাজপুরDIN
মাদ্রাসাMAD
কারিগরিTEC

রিভিউ রেজাল্ট কীভাবে জানবেন?

একবার আবেদন করলে, ফলাফল প্রকাশ হলে আপনাকে SMS করে জানিয়ে দেওয়া হবে।

তবে আপনি চাইলে বোর্ডের ওয়েবসাইটে গিয়েও চেক করতে পারেন।

👉 উদাহরণ: ঢাকা বোর্ড → dhakaeducationboard.gov.bd

সংক্ষেপে মনে রাখুন

  • আবেদন করা যাবে শুধুমাত্র Teletalk মোবাইল থেকে
  • আবেদনের তারিখ: ১১/০৭/২০২৫ হতে ১৭/০৫/২০২৫
  • প্রতি বিষয়ে ফি: ১৫০ টাকা
  • RSC বোর্ড রোল বিষয়ের কোড দিয়ে 16222 নাম্বারে পাঠাতে হবে
  • রিভিউ রেজাল্ট পাওয়া যাবে ১৫-৩০ দিনের মধ্যে
  • ফলাফল পরিবর্তিত হলে SMS আসবে

শেষ কথা

রেজাল্ট ভালো না হলে মন খারাপ হওয়া স্বাভাবিক। তবে সেখানেই থেমে যাওয়া ঠিক নয়। আপনি যদি বিশ্বাস করেন আপনার প্রাপ্য নম্বরের চেয়ে কম এসেছে, তাহলে অবশ্যই পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করুন।

আর হ্যাঁ, আবেদন করার আগে একটু সময় নিয়ে ঠিকঠাক তথ্যগুলো মিলিয়ে নিন, যাতে কোনো ভুল না হয়।

বন্ধুরা, আপনার যদি এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকে অথবা কারো কাজে লাগতে পারে মনে করেন, তাহলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

আপনার এসএসসি রেজাল্ট পুনঃনিরীক্ষণের জন্য রইলো অনেক শুভকামনা!

Leave a Comment