এসএসসি উত্তীর্ণদের জন্য ডাচ-বাংলা ব্যাংক শিক্ষাবৃত্তি ২০২৫: জেনে নিন আবেদনের নিয়ম

বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড (ডিবিবিএল) তার সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রতি বছরের ন্যায় ২০২৫ সালেও এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মেধাবী এবং আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তির ঘোষণা করেছে। এই বৃত্তি দেশের অসংখ্য সুবিধাবঞ্চিত মেধাবী শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন পূরণে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এই ব্লগ পোস্টে আমরা ডাচ-বাংলা ব্যাংক এসএসসি শিক্ষাবৃত্তি ২০২৫ সম্পর্কিত সকল খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

ডাচ-বাংলা ব্যাংক শিক্ষাবৃত্তির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

ডাচ-বাংলা ব্যাংক শিক্ষাবৃত্তি কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য হলো দেশের মেধাবী অথচ আর্থিকভাবে দুর্বল শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা অর্জনে সহায়তা করা। এর মাধ্যমে তারা যেন নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়তে পারে এবং দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে, সেই পথ সুগম করাই এই উদ্যোগের প্রধান উদ্দেশ্য। এই বৃত্তির মাধ্যমে ব্যাংকটি গ্রামীণ এবং অনগ্রসর অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ তৈরিতে বিশেষভাবে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। [৮]

শিক্ষাবৃত্তির পরিমাণ ও সময়কাল

ডাচ-বাংলা ব্যাংক এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে দুই বছরের জন্য এই বৃত্তি প্রদান করে থাকে। [২]

  • মাসিক বৃত্তি: নির্বাচিত প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ২,৫০০ টাকা করে প্রদান করা হবে। [৭]
  • বার্ষিক অনুদান: পাঠ্য উপকরণের জন্য বার্ষিক ২,৫০০ টাকা এবং পোশাক পরিচ্ছদের জন্য এককালীন ১,০০০ টাকা প্রদান করা হয়।

Таким образом, একজন শিক্ষার্থী দুই বছরে সর্বমোট ৬০,০০০ টাকা বৃত্তি হিসেবে পেয়ে থাকেন। [৯]

আবেদনের যোগ্যতা

ডাচ-বাংলা ব্যাংক এসএসসি শিক্ষাবৃত্তি ২০২৫-এর জন্য আবেদন করতে হলে শিক্ষার্থীদের কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা পূরণ করতে হবে। এই যোগ্যতাগুলো আবেদনকারীর অবস্থান (সিটি কর্পোরেশন, জেলা শহর বা গ্রামীণ এলাকা) এবং গ্রুপ (বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা) ভেদে ভিন্ন হতে পারে।

ন্যূনতম সিজিপিএ (চতুর্থ বিষয় ব্যতীত):

এলাকার ধরণন্যূনতম সিজিপিএ
সিটি কর্পোরেশন এলাকার অন্তর্গত স্কুল/শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৫.০০
জেলা শহর এলাকার অন্তর্গত স্কুল/শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৫.০০
গ্রামীণ/অনগ্রসর অঞ্চলের অন্তর্গত স্কুল/শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৪.৮৩ [২]

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শর্তাবলী:

  • আবেদনকারীকে অবশ্যই ২০২৫ সালে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। [১]
  • যে সকল ছাত্র-ছাত্রী সরকারি বৃত্তি ব্যতীত অন্য কোন উৎস থেকে বৃত্তি পাচ্ছেন, তারা ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এই শিক্ষাবৃত্তির জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। [৮]
  • গ্রামীণ এবং অনগ্রসর এলাকায় অবস্থিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বৃত্তির শতকরা ৯০ ভাগ নির্ধারিত থাকবে এবং মোট বৃত্তির শতকরা ৫০ ভাগ ছাত্রীদের প্রদান করা হবে। [৮, ১০]
  • আবেদনকারীকে চতুর্থ বিষয় ব্যতীত প্রাপ্ত জিপিএ অবশ্যই সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে। অন্যথায় আবেদনপত্র প্রাথমিকভাবেই বাতিল বলে গণ্য হবে।

আবেদন প্রক্রিয়া

ডাচ-বাংলা ব্যাংক শিক্ষাবৃত্তির জন্য আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনলাইন-ভিত্তিক। সরাসরি, ডাকযোগে বা কুরিয়ারের মাধ্যমে কোন আবেদন গ্রহণ করা হয় না। আগ্রহী এবং যোগ্য শিক্ষার্থীদের নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করে আবেদন করতে হবে:

১. অনলাইন আবেদন: ডাচ-বাংলা ব্যাংকের শিক্ষাবৃত্তি সংক্রান্ত ওয়েবসাইটে (app.dutchbanglabank.com/DBBLScholarship) গিয়ে আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে। [৪]

২. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড: আবেদনপত্রের সাথে নিম্নলিখিতเอกสารপত্রের স্ক্যান কপি সংযুক্ত করতে হবে:
* আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবির স্ক্যান কপি। [৪]
* আবেদনকারীর পিতা ও মাতার পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবির স্ক্যান কপি। [৪]
* এসএসসি/সমমান পরীক্ষার নম্বরপত্র ও প্রশংসাপত্রের স্ক্যান কপি। [৪]

আবেদনের সময়সীমা ও গুরুত্বপূর্ণ তারিখ (সম্ভাব্য)

বিগত বছরগুলোর তথ্যের ভিত্তিতে, ২০২৫ সালের ডাচ-বাংলা ব্যাংক এসএসসি শিক্ষাবৃত্তির জন্য নিম্নলিখিত সময়সীমাগুলো গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে:

  • আবেদন শুরু: জুলাই ২০২৫
  • আবেদনের শেষ তারিখ: আগস্ট ২০২৫
  • ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে বাছাইকৃত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ২০২৫ [১]
  • প্রাথমিকভাবে বাছাইকৃত প্রার্থীদের ‘Primary Selection Letter’ এবং ‘প্রদত্ত নির্দেশিকার’ প্রিন্ট কপিসহ সকল মূল সনদপত্রের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ডাচ-বাংলা ব্যাংকের যেকোনো শাখায় উপস্থিতির তারিখ: সেপ্টেম্বর ২০২৫

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই তারিখগুলো পূর্ববর্তী বছরের তথ্যের উপর ভিত্তি করে একটি সম্ভাব্য ধারণা মাত্র। সঠিক তারিখের জন্য শিক্ষার্থীদের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এবং জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতে লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

নির্বাচন প্রক্রিয়া

ডাচ-বাংলা ব্যাংক শিক্ষাবৃত্তির জন্য প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া অত্যন্ত স্বচ্ছ এবং মেধা-ভিত্তিক। সাধারণত দুটি ধাপে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়:

  • প্রাথমিক বাছাই: আবেদনকারীদের প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে এবং নির্ধারিত যোগ্যতা অনুযায়ী একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করা হয়। এই তালিকা ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। [৮]
  • চূড়ান্ত বাছাই: প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের মূল কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। সকল তথ্য সঠিক পাওয়া গেলে এবং ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্য বিবেচিত হলে চূড়ান্তভাবে বৃত্তির জন্য মনোনীত করা হয়। চূড়ান্ত ফলাফলও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়। [২]

সফল আবেদনের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ

  • আবেদনপত্র পূরণের আগে বৃত্তির বিজ্ঞাপনটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
  • অনলাইন আবেদনপত্রটি সতর্কতার সাথে এবং নির্ভুল তথ্য দিয়ে পূরণ করুন।
  • সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের স্ক্যান কপি পরিষ্কার এবং পঠনযোগ্য হতে হবে। ফাইলের আকার নির্ধারিত সীমার মধ্যে রাখতে হবে। [১]
  • আবেদনের শেষ তারিখের জন্য অপেক্ষা না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন।
  • নিয়মিত ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ওয়েবসাইট এবং আপনার প্রদানকৃত মোবাইল নম্বরে আসা এসএমএস পরীক্ষা করুন।

ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এই শিক্ষাবৃত্তি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের মেধাবী অথচ সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় সুযোগ। সঠিক তথ্য জেনে সময়মতো আবেদন করলে এই বৃত্তি একজন শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

ডাচ বাংলা ব্যাংক এসএসসি বৃত্তি ২০২৫DBBL scholarship for SSC 2025

Leave a Comment