ঢাকা কলেজ রিভিউ ২০২৫: কেন ভর্তি হবেন ঢাকা কলেজে? জেনে নিন সবকিছু একনজরে

এসএসসি পরীক্ষার পর জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক মোড়ে দাঁড়িয়ে আছো তুমি। চারদিকে হাজারো প্রশ্ন, হাজারো পরামর্শ। কোন কলেজে ভর্তি হবে? কোথায় গেলে স্বপ্নেরা ডানা মেলবে? তোমার এই ভাবনার রাজ্যে যদি “ঢাকা কলেজ” নামটি উঁকি দিয়ে থাকে, তবে আজকের এই লেখাটি তোমার জন্যই।

চলো, আজ আমরা একসঙ্গে ঘুরে আসি বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ ঢাকা কলেজের আঙিনা থেকে। কোনো গাইড বইয়ের মতো খটমটে ভাষায় নয়, বরং বন্ধুর মতো করে জানবো কলেজের খুঁটিনাটি সবকিছু। এই লেখাটি পড়ার পর ঢাকা কলেজ নিয়ে তোমার মনে জমে থাকা সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে বলে আশা করি।

ঢাকা কলেজ পরিচিতি: যেখানে ইতিহাস কথা বলে

১৮৪১ সালে ঢাকা কলেজ প্রতিষ্ঠিত। ভাবা যায়! প্রায় ২০০ বছরের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা এক প্রতিষ্ঠান ঢাকা কলেজ। এটি শুধু একটি কলেজ নয়, এটি একটি জীবন্ত ইতিহাস। ঢাকা নিউ মার্কেটের পাশে লাল ইটের যে সুবিশাল ক্যাম্পাসটি তুমি দেখো, সেটিই হাজারো তরুণের স্বপ্নের ঠিকানা। এই কলেজের দেয়ালগুলো দেখেছে ব্রিটিশ শাসন, পাকিস্তানের শোষণ, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম।

এই প্রতিষ্ঠানের মাটি থেকে জন্ম নিয়েছেন কত শত জ্ঞানী-গুণী, রাজনীতিবিদ, শিল্পী, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী—তার ইয়ত্তা নেই। তাই এখানে ভর্তি হওয়া মানে শুধু ভালো ফলাফলের নিশ্চয়তা নয়, বরং এক গৌরবময় ইতিহাসের অংশ হয়ে ওঠা।

ঢাকা কলেজ — এটি শুধু একটি কলেজ নয়, বরং বাংলাদেশের শিক্ষা ইতিহাসের একটি গৌরবময় অধ্যায়। ১৮৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজটি বাংলাদেশের সর্বপ্রথম আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে শিক্ষার প্রসারে এক অনন্য ভূমিকা রেখেছে। বহু প্রখ্যাত ব্যক্তি এখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে দেশ ও জাতির সেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।

  • প্রতিষ্ঠিত: ১৮৪১ সাল
  • প্রথম নাম: ঢাকা ইংলিশ seminary
  • বর্তমান নাম: ঢাকা কলেজ
  • অবস্থান: নিউমার্কেট সংলগ্ন, মিরপুর রোড, ঢাকা
Dhaka College Review
Dhaka College Review

 

ঢাকা কলেজের যাত্রা শুরু হয় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময়। শিক্ষানীতির অংশ হিসেবে ইংরেজি মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার প্রসার ঘটানোর উদ্দেশ্যে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে এটি একাধিকবার স্থানান্তরিত হলেও বর্তমানে এটি স্থায়ীভাবে নিউমার্কেট এলাকায় অবস্থিত।

কেন ঢাকা কলেজ? কী আছে এখানে?

হাজারো কলেজের ভিড়ে ঢাকা কলেজ কেন শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দের তালিকায় থাকে? এর পেছনে বেশ কিছু শক্তিশালী কারণ আছে। চলো জেনে নিই কলেজের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো।

  • ঐতিহ্য ও গৌরব: আগেই বলেছি, কলেজের প্রধান শক্তি এর দেড় শতাব্দীরও বেশি সময়ের ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্য তোমাকে প্রতিনিয়ত ভালো কিছু করার জন্য অনুপ্রাণিত করবে।
  • সেরা মানের শিক্ষক: ঢাকা কলেজের শিক্ষকদের মান নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। এখানে বেশিরভাগ শিক্ষকই বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের কর্মকর্তা। তাঁরা শুধু ক্লাসেই সেরা নন, ক্লাসের বাইরেও একজন শিক্ষার্থীর জন্য বড় ভাইয়ের মতো, অভিভাবকের মতো ছায়া দেন। তাঁদের পাঠদান পদ্ধতি এবং অভিজ্ঞতা তোমার ভিতকে করবে মজবুত।
  • চমৎকার একাডেমিক পরিবেশ: এখানে পড়াশোনার জন্য একটি আদর্শ পরিবেশ পাবে তুমি। চারদিকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের আনাগোনা, নিয়মিত ক্লাস, পরীক্ষা এবং শিক্ষকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণ তোমাকে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে সাহায্য করবে। এখানকার শিক্ষার্থীরা শুধু পড়াশোনাতেই নয়, নিজেদের মধ্যে জ্ঞানচর্চায়ও বেশ এগিয়ে।
  • সমৃদ্ধ লাইব্রেরি ও ল্যাব: জ্ঞানপিপাসুদের জন্য ঢাকা কলেজের লাইব্রেরি একটি স্বর্গরাজ্য। এখানে রয়েছে হাজার হাজার বইয়ের এক বিশাল সংগ্রহ। পাশাপাশি, বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ সুসজ্জিত ল্যাবরেটরি, যা হাতে-কলমে শেখার সুযোগ করে দেয়।
  • সহ-শিক্ষা কার্যক্রম (Co-curricular Activities): পড়াশোনার পাশাপাশি মনন ও নেতৃত্ব বিকাশের জন্য ঢাকা কলেজে রয়েছে নানা সুযোগ। এখানে সক্রিয় রয়েছে:
    • ঢাকা কলেজ ডিবেটিং সোসাইটি
    • ঢাকা কলেজ সায়েন্স ক্লাব
    • বিএনসিসি (সেনা, নৌ ও বিমান শাখা)
    • রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি
    • ঢাকা কলেজ রোভার স্কাউট গ্রুপ
    • বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন
      এই ক্লাবগুলো তোমার মধ্যে নেতৃত্ব, যোগাযোগ দক্ষতা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা তৈরিতে সাহায্য করবে।
  • বিশাল ক্যাম্পাস ও আবাসন সুবিধা: ঢাকার মতো ব্যস্ত শহরে এমন খোলামেলা, সবুজ ক্যাম্পাস পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। বিশাল খেলার মাঠ, অডিটোরিয়াম, ক্যাফেটেরিয়া—সবই আছে এখানে। শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ৮টি আবাসিক হল বা ছাত্রাবাস, যা পড়াশোনার জন্য নিরাপদ ও সুন্দর একটি পরিবেশ নিশ্চিত করে।

পাঠদান পদ্ধতি ও পরিবেশ: কেমন কাটে ক্লাসের সময়?

ঢাকা কলেজের পাঠদান পদ্ধতি অনেকটাই স্বতন্ত্র। এখানে গতানুগতিক লেকচারের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের মতবিনিময়ের ওপর জোর দেওয়া হয়।

  • নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা: এখানে ক্লাস ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ খুব কম। প্রতিটি অধ্যায় শেষে নেওয়া হয় ক্লাস টেস্ট। এছাড়াও নির্দিষ্ট সময় পর পর অনুষ্ঠিত হয় পর্ব পরীক্ষা এবং মডেল টেস্ট। এই ধারাবাহিক মূল্যায়ন বোর্ড পরীক্ষার জন্য তোমাকে পুরোপুরি প্রস্তুত করে তুলবে।
  • সিনিয়র-জুনিয়র সম্পর্ক: ঢাকা কলেজের সিনিয়র-জুনিয়র সম্পর্ক অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতাপূর্ণ। পড়াশোনার নোট থেকে শুরু করে ভর্তির তথ্য, কিংবা যেকোনো ব্যক্তিগত সমস্যায় সিনিয়র ভাইদের পাশে পাবে তুমি। এই সম্পর্কটা তোমাকে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে অনেক সাহায্য করবে।
  • শিক্ষকদের আন্তরিকতা: এখানকার শিক্ষকরা খুবই আন্তরিক। যেকোনো বিষয় বুঝতে সমস্যা হলে নির্দ্বিধায় তাঁদের কাছে যেতে পারো। তাঁরা ক্লাসের বাইরেও তোমাকে সময় দিতে কার্পণ্য করবেন না।

ঢাকা কলেজের বিভাগসমূহ

ঢাকা কলেজে উচ্চমাধ্যমিক, অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ে পাঠদান করা হয়।
উচ্চমাধ্যমিক বিভাগ (HSC):

  • বিজ্ঞান বিভাগ (Science)
  • ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ (Business Studies)
  • মানবিক বিভাগ (Humanities)

স্নাতক (সম্মান) ও মাস্টার্স বিভাগ:
ঢাকা কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ে পাঠদান করে।
বিভাগসমূহের মধ্যে রয়েছে:

  • বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান
  • গণিত, পদার্থ, রসায়ন, উদ্ভিদবিজ্ঞান
  • হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, মার্কেটিং ইত্যাদি

ঢাকা কলেজের ফলাফল

উচ্চ মাধ্যমিক (HSC) পরীক্ষার ফলাফলের দিকে তাকালে ঢাকা কলেজ বরাবরই সেরাদের কাতারে থাকে। প্রতি বছর এখান থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী GPA-5 পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। শুধু তাই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন সেরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তির দৌড়েও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখায়। এর মূল কারণ হলো, কলেজের দুই বছরের কঠোর নিয়মকানুন ও মানসম্মত শিক্ষা তোমাকে যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য তৈরি করে দেবে।

Dhaka College HSC Result
Dhaka College HSC Result

এখানে ঢাকা কলেজের এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৪ এবং ২০২৩ সালের বিভাগভিত্তিক ফলাফলের একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হলো।

ঢাকা কলেজ এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৪: ফলাফল

বিভাগ (Group) মোট পরীক্ষার্থী পাশ ফেল পাশের হার (%) জিপিএ-৫
বিজ্ঞান (Science) ৮১২ ৮০৮ ৯৯.৫১% ৭৯২
ব্যবসায় শিক্ষা (Business Studies) ১২৬ ১২৬ ১০০% ১০০
মানবিক (Humanities) ১১৫ ১১৪ ৯৯.১৩% ৭৫

ঢাকা কলেজ এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৩: ফলাফল

বিভাগ (Group) মোট পরীক্ষার্থী পাশ ফেল পাশের হার (%) জিপিএ-৫ পেয়েছে
বিজ্ঞান (Science) ৮৩৮ ৮৩৩ ৯৯.৪০% ৬৬৯
ব্যবসায় শিক্ষা (Business Studies) ১২৭ ১২৫ ৯৮.৪৩% ৬৬
মানবিক (Humanities) ১২৯ ১২৯ ১০০% ৮২

ঢাকা কলেজে ভর্তির যোগ্যতা

এবার আসি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে। ঢাকা কলেজে ভর্তি হতে হলে তোমার কী যোগ্যতা থাকতে হবে? মনে রাখতে হবে, ভর্তির যোগ্যতা প্রতি বছর বোর্ডের ফলাফল এবং প্রতিযোগিতার ওপর ভিত্তি করে কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে। তবে বিগত বছরগুলোর আলোকে একটি সাধারণ ধারণা নিচে দেওয়া হলো:

  • বিজ্ঞান বিভাগ (Science): উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির জন্য এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় ন্যূনতম GPA-5.00 থাকা আবশ্যক। সাধারণত গোল্ডেন GPA-5 পাওয়া শিক্ষার্থীরাই এখানে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়।
  • ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ (Business Studies): ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ভর্তির জন্য ন্যূনতম GPA-4.75 থেকে GPA-5.00 এর মধ্যে প্রয়োজন হতে পারে। আসনের উপর ভিত্তি করে এটি পরিবর্তিত হয়।
  • মানবিক বিভাগ (Humanities): মানবিক বিভাগে ভর্তির জন্য ন্যূনতম GPA-4.50 থেকে GPA-4.75 পর্যন্ত প্রয়োজন হতে পারে।

ভর্তি মানদণ্ড:
একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র SSC GPA এবং পছন্দক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হয়।

বিভাগ ন্যূনতম GPA (পূর্ববর্তী বছর অনুযায়ী)
বিজ্ঞান ৫.০০ 
ব্যবসা শিক্ষা ৪.৫০+
মানবিক ৪.০০+

বিশেষ দ্রষ্টব্য:  প্রতি বছর ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত সঠিক যোগ্যতা অবশ্যই দেখে নিতে হবে। ভর্তি প্রক্রিয়া শুরুর আগে শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তিটিই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।

ঢাকা কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া: কীভাবে করবে আবেদন?

বর্তমানে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক। কোনো ভর্তি পরীক্ষা হয় না, কেবল এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হয়। প্রক্রিয়াটি সাধারণত নিম্নরূপ:

  1. অনলাইন আবেদন: শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত ওয়েবসাইট (সাধারণত www.xiclassadmission.gov.bd) থেকে তোমাকে আবেদন করতে হবে।
  2. কলেজ পছন্দ: আবেদন করার সময় তোমাকে পছন্দের কলেজের একটি তালিকা দিতে হবে। তুমি সর্বোচ্চ ১০টি কলেজ পছন্দ করতে পারবে। স্বপ্ন যদি হয় ঢাকা কলেজ, তবে পছন্দের তালিকার ১ নম্বরে ঢাকা কলেজকে রাখতে হবে।
  3. ফলাফল প্রকাশ: আবেদন প্রক্রিয়া শেষে নির্দিষ্ট তারিখে ফলাফল প্রকাশিত হবে। ফলাফলে দেখানো হবে তুমি কোন কলেজের জন্য নির্বাচিত হয়েছ।
  4. ভর্তি নিশ্চায়ন: তুমি যদি ঢাকা কলেজের জন্য নির্বাচিত হও, তবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি জমা দিয়ে তোমাকে ভর্তি নিশ্চায়ন করতে হবে।
  5. চূড়ান্ত ভর্তি: নিশ্চায়নের পর কলেজ কর্তৃক নির্ধারিত তারিখে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (যেমন: এসএসসির নম্বরপত্র, প্রশংসাপত্র, ছবি ইত্যাদি) নিয়ে কলেজে গিয়ে চূড়ান্ত ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।

পুরো প্রক্রিয়াটি সহজ হলেও প্রতিটি ধাপ খুব সাবধানে সম্পন্ন করা উচিত। তারিখ এবং নিয়মকানুনের জন্য নিয়মিত অফিসিয়াল ওয়েবসাইট খেয়াল রাখতে হবে।

অনার্স ও মাস্টার্স ভর্তি:

  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষার পরিবর্তে মেধাতালিকা এবং SSC ও HSC GPA এর ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। তবে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে পুনরায় ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে অনার্স ১ম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে।

ঢাকা কলেজের বেতন ও অন্যান্য ফি: খরচ কেমন?

অনেকেই ভাবে, এতো ভালো কলেজে পড়ার খরচ হয়তো অনেক বেশি। কিন্তু আনন্দের বিষয় হলো, ঢাকা কলেজ একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এর খরচ বেসরকারি কলেজের তুলনায় অনেক কম।

  • ভর্তি ফি: ভর্তি প্রক্রিয়ার সময় সব মিলিয়ে আনুমানিক ৮,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা লাগতে পারে। এর মধ্যে ভর্তি ফি, উন্নয়ন ফি, এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকে।
  • মাসিক বেতন: মাসিক বেতন খুবই সামান্য।
  • অন্যান্য ফি: পরীক্ষার ফি, ফর্ম ফিলাপের ফি ইত্যাদি বোর্ড এবং কলেজ কর্তৃক নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী দিতে হবে।

মোটকথা, একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্যও ঢাকা কলেজে সন্তানকে পড়ানো মোটেও কঠিন নয়।

শিক্ষক ও পাঠদান পদ্ধতি

  • কলেজে রয়েছে অভিজ্ঞ ও মানসম্পন্ন শিক্ষকবৃন্দ।
  • ক্লাসে নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়।
  • উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতির জন্য স্পেশাল ক্লাসমডেল টেস্ট নেওয়া হয়।
  • অনার্স বিভাগে শিক্ষকেরা গবেষণাভিত্তিক শিক্ষাদানেও উৎসাহ দেন।

সুযোগ-সুবিধা

ঢাকা কলেজে একাডেমিকপড়াশোনার পাশাপাশি অন্যান্য সুযোগ সুবিধার দিক দিয়েও বেশ সমৃদ্ধ। এই কলেজে ভর্তি হলে আপনি নিচের সুবিধাগুলো পাবেন।

১. গ্রন্থাগার:: ঢাকা কলেজের লাইব্রেরি বেশ সমৃদ্ধ, যেখানে রয়েছে হাজার হাজার বই, রেফারেন্স ম্যাটেরিয়াল, ও বিভিন্ন জার্নাল।

২. ল্যাব ও ক্লাসরুম: বিজ্ঞান বিভাগের জন্য রয়েছে উন্নতমানের ল্যাব। ক্লাসরুমে রয়েছে প্রজেক্টর ও মাল্টিমিডিয়া সুবিধা।

৩. খেলাধুলা ও সংস্কৃতি: কলেজে রয়েছে বিশাল খেলার মাঠ, যেখানে ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল খেলা হয়।
কলেজের সাংস্কৃতিক দল নাটক, বিতর্ক, সংগীতসহ নানা আয়োজনে অংশগ্রহণ করে।

৪. আবাসিক সুবিধা: ঢাকা কলেজে রয়েছে ছাত্রাবাস, যা বাইরের জেলার শিক্ষার্থীদের জন্য উপকারী। তবে আবাসনের আসন সংখ্যা সীমিত।

ঢাকা কলেজের উল্লেখযোগ্য কৃতি শিক্ষার্থীবৃন্দ

ঢাকা কলেজের অনেক প্রাক্তন শিক্ষার্থী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতিমান হয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন:

  • ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
  • জ্ঞানতাপস মহাফুজুর রহমান
  • সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান
  • বহু বিচারপতি, অধ্যাপক, প্রশাসক ও গবেষক

ঢাকা কলেজ কি রাজনীতিমুক্ত?

ঢাকা কলেজে ছাত্ররাজনীতি রয়েছে, যা একটি সময় পর্যন্ত গঠনমূলক হলেও মাঝে মাঝে এর প্রভাব শিক্ষার পরিবেশে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে প্রশাসন বর্তমানে তা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

শেষ কথা

ঢাকা কলেজে কাটানো দুটি বছর শুধু তোমার একাডেমিক জীবনের ভিত গড়ে দেবে না, বরং তোমাকে একজন পরিপূর্ণ ও আত্মবিশ্বাসী মানুষ হিসেবে তৈরি করবে। এখানকার পরিবেশ, বন্ধু-বান্ধব, বড় ভাই এবং শিক্ষকরা মিলে তোমাকে এমন এক জগৎ উপহার দেবে, যা সারাজীবন তোমার স্মৃতিতে অমলিন হয়ে থাকবে।

যদি তোমার এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল ভালো হয় এবং নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস থাকে, তবে ঢাকা কলেজ হতে পারে তোমার জন্য সেরা একটি প্ল্যাটফর্ম। লাল ইটের এই ক্যাম্পাস তোমাকে সাদরে গ্রহণ করার জন্য অপেক্ষা করছে। তোমার ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য রইল অনেক অনেক শুভকামনা!

Leave a Comment