ইমদাদ-সিতারা খান বৃত্তি ২০২৫: উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) শিক্ষার্থীদের আবেদনের নিয়ম

বাংলাদেশের অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন দেখলেও, আর্থিক সংকটের কারণে সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারে না। বিশেষ করে গ্রামীণ ও নিম্নআয়ের পরিবারের অনেক ছাত্র-ছাত্রী প্রতিদিন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। এই বাস্তবতা মাথায় রেখে স্পন্দনবি বাংলাদেশইমদাদ-সিতারা খান ফাউন্ডেশন প্রতিবছরই শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় ঘোষণা করা হয়েছে “ইমদাদ-সিতারা খান বৃত্তি ২০২৫”

এই বৃত্তি মূলত তাদের জন্য, যারা সদ্য ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বর্তমানে উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পর্যায়ে পড়াশোনা করছে এবং আর্থিকভাবে অসচ্ছল। বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থীরা এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবে।

এই পােস্টে আপনি ইমদাদ-সিতারা খান বৃত্তি ২০২৫ এর আবেদনের যোগ্যতা, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, আবেদন করার ধাপ, বাছাই প্রক্রিয়া ও গুরুত্বপূর্ণ টিপস জানতে পারবেন।

কেন ইমদাদ-সিতারা খান বৃত্তি গুরুত্বপূর্ণ?

বাংলাদেশে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী আর্থিক সংকটের কারণে তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে না। ইমদাদ-সিতারা খান বৃত্তি এমন শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে তাদের শিক্ষাজীবনকে অব্যাহত রাখতে সাহায্য করে। বৃত্তি শুধু টাকাপয়সা নয়—এটি শিক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাস, ভবিষ্যৎ লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক একটি মাধ্যম। এই বৃত্তি গ্রহণ করলে শিক্ষাগত খরচ (ভর্তি, টিউশন ফি, পাঠ্যপুস্তক ইত্যাদি) প্রদানের মাধ্যমে সহায়তা করে এবং ভবিষ্যৎ শিক্ষাজীবনে পথ প্রশস্ত করে।

বাংলাদেশে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি দিয়ে থাকে। তবে ইমদাদ-সিতারা খান ফাউন্ডেশন বৃত্তির একটি বিশেষ দিক হলো – এটি শুধু ফলাফলের ভিত্তিতে নয়, শিক্ষার্থীর পারিবারিক আর্থিক অবস্থা ও বাস্তব চাহিদা বিবেচনা করেই প্রদান করা হয়।

অর্থাৎ, যে শিক্ষার্থীরা সত্যিই আর্থিকভাবে পিছিয়ে আছে কিন্তু পড়াশোনায় মেধাবী, তারাই বেশি অগ্রাধিকার পায়। ফলে এই বৃত্তি প্রকৃত অর্থে শিক্ষার্থীদের জীবন ও শিক্ষাজীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

এই বৃত্তি শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, এটি শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে। বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারে যে তাদের মেধা ও পরিশ্রম মূল্যায়িত হচ্ছে।

বাংলাদেশে গ্রামীণ ও দরিদ্র পরিবারের হাজারো মেধাবী শিক্ষার্থী আছে, যারা প্রতিদিন পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য সংগ্রাম করছে। ইমদাদ-সিতারা খান বৃত্তি ঠিক এই শিক্ষার্থীদের হাত ধরে তাদের স্বপ্ন পূরণের পথে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়।

ইমদাদ-সিতারা খান বৃত্তির বৈশিষ্ট্য

  • মেধা ও আর্থিক প্রয়োজন—উভয় দিক বিবেচনা করা হয়।
  • এসএসসি ২০২৫ উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।
  • আবেদনপত্র প্রিন্ট করে পূরণ করে ডাকযোগে পাঠাতে হয় ।

ইমদাদ-সিতারা খান বৃত্তি আবেদনের যোগ্যতা

ইমদাদ-সিতারা খান বৃত্তি ২০২৫ এর জন্য কিছু যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবেদনকারীদের অবশ্যই নিচের শর্ত পূরণ করতে হবে –

শিক্ষাগত যোগ্যতা

  • বিজ্ঞান বিভাগ: এসএসসি পরীক্ষায় ন্যূনতম GPA ৪.৮০

  • মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ: এসএসসি পরীক্ষায় ন্যূনতম GPA ৪.৫০

অন্যান্য যোগ্যতা

  • আবেদনকারীকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।

  • আবেদনকারীর পারিবারিক আর্থিক অবস্থা দুর্বল হতে হবে এবং তা প্রমাণ করতে হবে।

  • আবেদনকারীর আবেদনপত্রে সঠিক ও নির্ভুল তথ্য থাকতে হবে।

অন্যান্য শর্ত

  • বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে।
  • পারিবারিকভাবে আর্থিকভাবে অসচ্ছল হতে হবে এবং প্রমাণপত্র দিতে হবে।
  • আবেদনপত্রে সঠিক ও সত্য তথ্য থাকতে হবে; মিথ্যা তথ্য দিলে প্রত্যাখ্যান হবে।

ইমদাদ-সিতারা খান বৃত্তি আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

আবেদন পূরণের সময় নিচের কাগজগুলো নিশ্চিতভাবে লাগবে—

  1. বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষের প্রত্যয়নপত্র।
  2. এসএসসি পরীক্ষার মার্কশিট/ট্রান্সক্রিপ্টের ফটোকপি।
  3. সদ্য তোলা ২ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি (পিছনে নাম লিখে দিতে হবে)।
  4. আবেদনকারীর পারিবারিক আর্থিক অবস্থা ও আয়-ব্যয় এর বিবরণ (২৫০-৩০০ শব্দে লিখতে হবে)।
  5. স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা প্রতিষ্ঠান প্রধানের সুপারিশপত্র (যদি থাকে)।
  6. দরিদ্র/অসহায় প্রমাণপত্র (যদি থাকে)।
ইমদাদ-সিতারা খান বৃত্তি ২০২৫: এসএসসি ২০২৫ পাশ শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি আবেদন
ইমদাদ-সিতারা খান বৃত্তি ২০২৫: এসএসসি ২০২৫ পাশ শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি আবেদন Form

 

ইমদাদ-সিতারা খান বৃত্তি আবেদন করার নিয়ম

ইমদাদ-সিতারা খান বৃত্তির আবেদন করতে হলে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন–

  1. আবেদন ফরম সংগ্রহ: আবেদন ফরম স্পন্দনবি অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করুন: www.spaandanb.org
  2. ফরম পূরণ: সঠিকভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তথ্য পূরণ করুন। ভুল তথ্য দিলে আবেদন বাতিল হবে। ছবির পেছনে নাম লিখতে ভুলবেন না।
  3. কাগজপত্র সংযুক্ত: উপরের সব কাগজপত্র সংযুক্ত করুন।
  4. আবেদন পাঠানো:

    ডাকযোগে আবেদনপত্র পাঠাতে হবে এই ঠিকানায় –

    ইমদাদ-সিতারা খান বৃত্তি সিলেকশন কমিটি
    স্পন্দনবি বাংলাদেশ অফিস
    বাসা #১/২, শ্যামলীবাগ #১, ফ্ল্যাট # ৭/২, গার্ডেন স্ট্রিট, রিং রোড, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

  5. আবেদনের সময়সীমা: আবেদনের শেষ তারিখ: ২ নভেম্বর ২০২৫ (রবিবার) — নির্দিষ্ট তারিখের আগে আবেদনের কাগজপত্র পৌঁছানো আবশ্যক।

আবেদন পত্র লেখার বিশেষ নির্দেশনা

  • আবেদনকারীর পারিবারিক আয় ও ব্যয়ের বিবরণ অবশ্যই সঠিকভাবে দিতে হবে।
  • আবেদনকারীর বাবার-মায়ের পেশা এবং মোবাইল নম্বর উল্লেখ করতে হবে।
  • কোনো ছবি সংযুক্ত না করলে আবেদন বাতিল বলে গণ্য হবে।
  • আবেদনপত্রে কোথাও কপি করা লেখা থাকলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
  • ২৫০-৩০০ শব্দে নিজের পারিবারিক অবস্থা ও পড়াশোনার স্বপ্ন লিখতে হবে।

আবেদনপত্রে কিভাবে আকর্ষণীয় ২৫০–৩০০ শব্দের বর্ণনা লিখবেন

বর্ণনাটি লেখার সময় কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখুন—

  • সংক্ষিপ্তভাবে পরিবারের পরিচিতি ও আয়ের উৎস বলুন।
  • কেন আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন তা স্পষ্টভাবে লিখুন।
  • বৃত্তি পেলে সেটি কীভাবে ব্যবহার করবেন (টিউশন ফি, বই, খাতা-কলম, যাতায়াত ইত্যাদি) তা উল্লেখ করুন।
  • ভবিষ্যৎ লক্ষ্য ও পরিকল্পনা সংক্ষেপে লিখুন (উদাহরণ: চিকিৎসা, ইঞ্জিনিয়ারিং বা শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান)।
  • সত্যনিষ্ঠ হোন; অতিরঞ্জিত বিবরণ দেবেন না।

কিছু সাধারণ ভুল ও তা কিভাবে এড়াবেন

  • ছবি সংযুক্ত না করা — আবেদন বাতিলের প্রধান কারণ।
  • ভুল বা অসম্পূর্ণ কাগজপত্র — আবেদন না নেওয়া হতে পারে। যোগযোগের নম্বর অবশ্যই চেক করে নিবেন।
  • মিথ্যা তথ্য —আবেদন প্রত্যাখ্যান ও ভবিষ্যতে সুযোগ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • জমা দেওয়ার আগে কপি রেখে নিন এবং চেকলিস্ট মেনে সবকিছু ঠিক আছে কিনা যাচাই করুন।

নির্বাচন প্রক্রিয়া ও পরবর্তী ধাপ

সিলেকশন কমিটি আবেদনপত্র যাচাই করে প্রাথমিক তালিকা করবে। পরে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সাক্ষাৎকার বা ফোন যাচাই করা হতে পারে। নির্বাচিত হলে বৃত্তি প্রদান পদ্ধতি ও নিয়মাবলি আলাদা করে জানানো হবে।

বৃত্তি পাওয়ার পর দায়িত্ব

বৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের থেকে আশা করা যেতে পারে যে তারা নিয়মিত অগ্রগতি রিপোর্ট দিবে, কমিটির নির্দেশ মেনে চলবে এবং সময়মতো প্রয়োজনীয় তথ্য দেবে। ভবিষ্যতে যখন সক্ষম হবেন তখন অন্য মেধাবী শিক্ষার্থীদের সাহায্য করার মনোভাব রাখবেন।

ইমদাদ-সিতারা খান বৃত্তি বিষয়ক প্রশ্নোত্তর (FAQ)

প্রশ্ন: আবেদন অনলাইনে করা যাবে কি?
উত্তর: না, অনলাইনে আবেদন করার কোনো সুযোগ নেই।  বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, আবেদনফরম ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করে পূরণ করে ডাকযোগে পাঠাতে বলা হয়েছে।

প্রশ্ন: বৃত্তির পরিমাণ কত?
উত্তর: বিজ্ঞপ্তিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ না থাকলেও বৃত্তির পরিমাণ পরে জানানো হবে।

প্রশ্ন: ইমদাদ সিতারা খান বৃত্তির জন্য আবেদন করা উচিত কি না?

উত্তর: অবশ্যই আবেদন করা উচিত। কারণ এটি একটি প্রতিযোগিতামূলক বৃত্তি – যারা আগে আবেদন করবে এবং নিয়ম মেনে আবেদন করবে, তাদের সুযোগ বেশি থাকবে। ২০২৫ সালে এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি বিরল সুযোগ। এই বৃত্তি পেলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার খরচের বড় একটি অংশ মেটাতে পারবে।

শেষ কথা

ইমদাদ-সিতারা খান বৃত্তি ২০২৫ নিঃসন্দেহে মেধাবী কিন্তু আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় সুযোগ। এ ধরনের বৃত্তি শিক্ষার্থীদের শুধু পড়াশোনার খরচ জোগায় না, বরং তাদের স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যেতে প্রেরণা জোগায়।

তাই, যারা ২০২৫ সালে এসএসসি পাস করেছে এবং উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনা করছেন, তারা অবশ্যই সময়মতো এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারেন। বৃত্তি সংক্রান্ত আর কিছু জানার থাকলে নিচে কমন্টে করুন। ধন্যবাদ।

Leave a Comment